IQNA

কুরআন তিলাওয়াত একটি অনন্য শিল্প/৩০

কানাডিয়ান পাইলটের ইসলাম ধর্ম গ্রহণে মুহাম্মদ রিফাতের কণ্ঠের প্রভাব

0:52 - April 07, 2023
সংবাদ: 3473574
তেহরান (ইকনা): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক কানাডিয়ান পাইলট মিশরীয় বিখ্যাত ক্বারি মুহাম্মদ রিফাতের কণ্ঠ শুনে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই আগ্রহ তাকে মিশরে যেয়ে মুহাম্মদ রিফাতকে খুঁজে, তার উপস্থিতিতে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করে।

মুহাম্মদ রিফাত ১৮৮২ সালে মিশরের কায়রোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এমন এক বাড়িতে বড় হয়েছেন যেখানে সবাই কুরআনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। সে কারণেই তিনি প্রথম থেকেই কুরআনের সাথে পরিচিত হন। মুহাম্মদ রিফাত তার দুই বছর বয়সেই একটি বিশেষ রোগে আক্রান্ত হন, যার কারণে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। এমন অবস্থায়ও তিনি মক্তবে গিয়ে কুরআন তিলাওয়াত শেখেন এবং পরিশেষে কুরআন তিলাওয়াতে উচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যান।
১৯৩৪ সালে যখন মিশরে প্রথম কেবল রেডিওর যাত্রা শুরু হয়, তখন সেখানকার অনেক কর্মকর্তা জাতীয় খ্যাতি প্রাপ্ত মুহাম্মদ রিফাতকে, রেডিওতে তিলাওয়াত করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। ১৯৩৪ সালের ২৯শে ডিসেম্বর মোহাম্মদ রিফাতের সূরা ফাতহ তিলাওয়াত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
রিফাতের কণ্ঠ রেডিওতে প্রচারিত হলে, শুধু মিশরের মানুষ নয় বরং বাইরের দেশেও তার কণ্ঠ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কেননা রিফাতের তিলাওয়াতে এক ধরনের আবেগ এবং সংবেদনশীলতা প্রকাশ পেত যা দ্রুত মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এবং এমনকি তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় রেডিও আরব দেশগুলির শ্রোতাদের আকর্ষণ করার জন্য তার তিলাওয়াত সম্প্রচার করত। এতে কয়েকটি আশ্চর্যজনক ঘটনারও সৃষ্টি হয়। যার মধ্যে একটি হল পশ্চিম সাহারায় ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে থাকা একজন কানাডিয়ান পাইলট মিশরীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচারকারী ব্রিটিশ রেডিও থেকে রিফাতের কণ্ঠে তিলাওয়াত শুনতে পায়। রিফাতের কণ্ঠ তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, সে তার বন্ধুদেরকে বলে তাকে যেন দ্রুত একটি কুরআন সরবরাহ করা হয়।
অতঃপর, তিনি ইসলাম এবং মুসলমানদের সম্পর্কে অনেক অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি মুহাম্মদ রিফাতকে খুঁজে পেতে কায়রো যান এবং তার উপস্থিতিতে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এছাড়াও, তিনি তাকে তার জন্য একটি উপযুক্ত ইসলামি নাম নির্বাচন করতে বলেন।
মুহাম্মদ রিফাতের তিলাওয়াতে অনেক আধ্যাত্মিক প্রভাব ছিল। তার তিলাওয়াতগুলি সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ায় সেগুলোকে সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিলনা। তবে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে তার তিলাওয়াত রেকর্ড করত তাই মুহাম্মদ রিফাতের তিলাওয়াতের খুব কম সংখ্যকই বাকি রয়েছে।
১৯৪৩ সালে, রেডিওতে একটি লাইভ অনুষ্ঠানের মধ্যেই মুহাম্মদ রিফাতের কণ্ঠ আটকে যায়। চিকিৎসার সময় জানা যায় তার স্বরযন্ত্রের ফুলে গেছে। আর এই সমস্যার কারণে তার কথা বন্ধ হয়ে যায় এবং এরপর থেকে আর তিনি কুরআন তিলাওয়াত চালিয়ে যেতে পারেননি। অবশেষে ১৯৫০ সালের ৯ই মে সোমবার সকালে তার জন্মবার্ষিকীর দিনে মৃত্যুবরণ করেন। 3486414

captcha