IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ/৬৫

আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তনের সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ পন্থা

21:05 - March 20, 2023
সংবাদ: 3473497
তেহরান (ইকনা): নানাবিধ গোনাহ মানুষকে গ্রাস করে ফেলেছে। যা মানুষকে আল্লাহ এবং আধ্যাত্মিকতার বন্ধন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এই সমস্যার কারণে মানুষ নিজেকে শূন্যতায় হারিয়ে ফেলে এবং মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা।
পবিত্র কুরআনের ৬৬তম সূরা’র নাম "তাহরীম"। ১২টি আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি পবিত্র কুরআনের ২৮তম পারায় অবস্থিত। এই সূরাটি মাদানী সূরা এবং নাযিলের ক্রমানুসারে এই সূরাটি ১০৮তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।
সূরাটির প্রথম আয়াত হতে তাকে নামকরণ করা হয়েছে। যা রসুলুল্লাহ (সা.)-কর্তৃক নিজ স্ত্রীদের সন্তুষ্টির জন্য, হালাল কে নিজের জন্য হারাম করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে।
সূরা তাহরীম রসুলুল্লাহ (সা.)-কে তিরস্কার করার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় কেননা তিনি নিজ স্ত্রীদের সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত হালাল কে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করেন।
অতঃপর আল্লাহ মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন তারা যেন নিজেদের ও নিজ পরিবারকে আগুনের আযাব হতে দূরে রাখে এবং এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখে যে, তারা দুনিয়াতে যা কিছুই করে তার সবকিছুরই প্রতিদান দেয়া হবে। অন্যদিকে, গোনাহগার যদি অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে, এই কাজ তাকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে উৎসাহিত করে।
এই সূরায় সর্বোত্তম তওবাকে বলা হয়েছে ‘তওবাতুন নুসুহ’। অর্থাৎ পুনরায় গোনাহে ধাবিত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণরূপে তওবা করা। "তওবা-এ নুসুহ" পরিভাষাটি পবিত্র কুরআনে শুধুমাত্র এই সূরাতেই বর্ণিত হয়েছে। ইসলামী সংস্কৃতিতে পরিভাষাটির বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে।
“নুসুহ” শব্দটির অর্থ সর্বোত্তম কাজ খোঁজার চেষ্টা করা যা মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে। এর অপর একটি অর্থ হচ্ছে আন্তরিকতা। উক্ত অর্থ-দ্বয়ের আলোকে তওবা-এ নুসুহ হচ্ছে এমন একটি তওবা যা তওবাকারীকে গোনাহের দিকে ধাবিত হওয়া থেকে বিরত রাখে বা এমন তওবা যা বান্দাদেরকে গোনাহ থেকে পবিত্র করে এবং ফলশ্রুতিতে তওবা-কৃত গোনাহের কাজটি পুনরায় আঞ্জাম দিতে বাধা দেয়।    
এই আয়াতসমূহে, উদাহরণস্বরূপ হযরত নুহ (আ.)-এর স্ত্রী এবং হযরত লুত (আ.) -এর স্ত্রীকে অপবিত্র ও তাদের স্বামীদেরকে পবিত্র এবং ফেরাউনের স্ত্রীকে মুমিন ও তার স্বামীকে কাফের হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সবশেষে স্বামী-বিহীন মুমিন নারীর [হযরত মরিয়ম (আ.)] উদাহরণ দিয়েছেন। মনে হয় এই উদাহরণগুলো একারণে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে মুমিনরা নবীদের স্ত্রীদের সাথে ঘটে যাওয়া ভুল কর্ম-কাণ্ডে বিস্মিত না হয়। ঐরূপ এমন সিদ্ধান্তেও উপনীত হওয়া যায় যে, পারিবারিক সম্পর্ক মানুষের সৌভাগ্য ও পরিত্রাণের নিশ্চয়তা বা পার্থিব চাওয়া পূরণের কারণ হতে পারে না। যেরূপ-ভাবে শুধুমাত্র হযরত নুহ (আ.) ও হযরত লুত (আ.) নবীর স্ত্রী হওয়াটা তাদেরকে পরিত্রাণ এনে দিতে পারেনি। এর বিপরীতে হযরত আসিয়া (আ.) ফেরাউনের মত কাফেরের স্ত্রী হয়েও নিজের ব্যক্তিত্ব ও পবিত্র সত্তা দিয়ে পরিত্রাণ এবং সৌভাগ্য লাভ করেছেন। এমনকি কারো স্ত্রী না হয়েও হযরত মরিয়ম (আ.) তার ঈমান ও পবিত্র সত্তার মাধ্যমে সুউচ্চ মাকামের অধিকারী হয়ে মুমিনদের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। 
কি ওয়ার্ড: কুরআনের সূরাসমূহ, ১১৪, সূরা তাহরীম, নবীদের স্ত্রী।

 

ট্যাগ্সসমূহ: কুরআনের সূরাসমূহ
captcha