IQNA

আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর জ্ঞানসাধনা

10:43 - November 07, 2022
সংবাদ: 3472778
তেহরান (ইকনা): শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-কে মানুষ সাধারণত একজন সুফিসাধক হিসেবেই জানেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং তিনি বাহ্যিক জ্ঞানচর্চাকে উপেক্ষা করে চলতেন। অথচ তিনি ছিলেন সময়ের বিখ্যাত ফকিহ ও হাম্বলি মাজহাবের প্রাজ্ঞ আলেম। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর মাদরাসায় নিয়মতান্ত্রিক পাঠদান করেছেন।
নাম ও জন্ম : শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) ১১ রবিউস সানি ৪৭০ হিজরি মোতাবেক ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জিলান নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে জিলান গ্রামের অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতভিন্নতা আছে। তাদের একদল বলেন, তিনি ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত জিলান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। অন্যদের মতে, জিলান ইরাকের একটি ঐতিহাসিক গ্রাম। বাগদাদ থেকে যার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। তাঁর নাম আবদুল কাদির। বাবার নাম আবু সালিহ মুসা। উপনাম আবু মুহাম্মদ। উপাধি মুহিউদ্দিন। এই হিসেবে তাঁকে আবু মুহাম্মদ মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির ইবনে মুসা সম্বোধন করা হতো।
 
পরিবার : শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর বংশধর। তাঁর বংশপরম্পরা হাসান ইবনে আলী (রা.)-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তাঁর বাবা আবু সালিহ মুসা (রহ.)-ও যুগের শ্রেষ্ঠ সুফি সাধক ছিলেন। তাঁর মাতাও ছিলেন একজন আল্লাহভীরু মহীয়সী নারী। আর নানা ছিলেন একজন বিশিষ্ট বুজুর্গ আলেম।
 
শিক্ষা : শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) জন্মস্থান জিলানে নিজ পরিবারের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১২ বছর বয়সে বাগদাদে গমন করেন। তখন খলিফা মুস্তাজহির বিল্লাহর শাসনামল চলছিল। তিনি বাগদাদে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মাখরামি (রহ.)-এর মাদরাসায় ভর্তি হন। বিস্ময়কর বিষয় হলো, শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) ৪৮৮ হিজরিতে বাগদাদে প্রবেশ করেন এবং এই বছরই হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি (রহ.) বাগদাদের নিজামিয়া মাদরাসা ছেড়ে চলে যান। সুফিসাধকরা বলেন, যোগ্য উত্তরসূরির আগমনে আশ্বস্ত হয়েই ইমাম গাজালি (রহ.) বাগদাদ ত্যাগ করেন।
 
ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়, শায়খ জিলানি (রহ.) যখন বাগদাদে আসছিলেন পথে তাদের কাফেলা একটি ডাকাত দলের কবলে পড়ে। ডাকাতরা যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার কাছে কী আছে? তখন তিনি বলেন, আমার কাছে মায়ের দেওয়া ৪০টি দিরহাম আছে। তাঁর এই সত্য উচ্চারণে ডাকাত দল আশ্চর্য হয় এবং তারা তাওবা করে ভালো হয়ে যায়।
 
যাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন : শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানি, আবু বকর আহমদ ইবনে মুজাফফর, আবুল কাসেম আলী ইবনে বায়ান (রহ.)-এর কাছে হাদিস; আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকিল, আবুল খাত্তাব মাহফুজ ইবনে আহমদ হাম্বলি, আবুল হাসান মুহাম্মদ ইবনে কাজি (রহ.)-এর কাছে ফিকহ; আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকিল হাম্বলি, আবুল খাত্তাব মাহফুজ ইবনে আহম হাম্বলি (রহ.)-এর কাছে তাফসির এবং আলী জাকারিয়া ইয়াহইয়া তিবরিজি (রহ.)-এর কাছে অলংকার শাস্ত্রের পাঠ গ্রহণ করেন।
 
আত্মশুদ্ধি : আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর শায়খ ছিলেন আবু মুহাম্মদ জাফর ইবনে আহমদ আস-সিরাজি, শায়খ হাম্মাদ বিন মুসলিম আদ-দাব্বাস, কাজি আবু সাঈদ আল-মুখাররামি (রহ.) প্রমুখ। এ ছাড়া তিনি বাগদাদের প্রসিদ্ধ বহু সুফি সাধক ও আধ্যাত্মিক রাহবারদের সান্নিধ্য গ্রহণ করেন।
 
পাঠদান : শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) বাগদাদে অবস্থানের ৩৩ বছরই মাদরাসায় অতিবাহিত করেন। তিনি সেখানে পাঠদান ও ওয়াজ-নসিহত একত্রে করতেন। যেমন তিনি প্রত্যেক শুক্র, রবি ও মঙ্গলবার সাধারণ মানুষের উদ্দেশে নসিহত পেশ করতেন। প্রতিবছর তাঁর মাদরাসা থেকে তিন হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া শেষ করত। তিনি নিজেই কোরআন, হাদিস, তাফসির ও ফিকহ শাস্ত্রের পাঠদান করতেন।
 
রচনাবলি : শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর রচনাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো : ইগাসাতুল আরিফিন, আদাবুস সুলুক, তুহফাতুল মুত্তাকিন, জালাউল খাতির, গুনয়াতুত তালিবিন, ফাতহুর রব্বানি, ফাতহুল গুয়ুব ইত্যাদি।
 
ইন্তেকাল : শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) ১০ রবিউস সানি ৫৬১ হিজরি শনিবার ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বাগদাদে তাঁর মাদরাসার প্রাঙ্গণেই তাঁকে দাফন করা হয়।
 
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) রচিত ‘গিবতাতুন নাজির
 
 ফি তারজুমাতি শায়খ আবদুল কাদির’ অবলম্বনে
 
 
 
 
 
captcha