IQNA

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি;

মার্কিন সরকার এমন এক হিংস্র নেকড়ে যা মাঝে মধ্যে ধূর্ত শিয়ালে পরিণত হয়

19:20 - August 28, 2021
সংবাদ: 3470574
তেহরান (ইকনা): ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি আফগান জনগণের প্রতি ইরানের সহায়তার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট রায়িসির প্রস্তাবিত মন্ত্রীরা আজ (শনিবার) জাতীয় সংসদে আস্থাভোটে জয়লাভের পর সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে প্রথমবার দেখা করতে গেলে সর্বোচ্চ নেতা ওই মন্তব্য করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আফগানিস্তানকে অভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির বন্ধনে আবদ্ধ ভাইয়ের দেশ হিসেবে অভিহিত করে সেখানকার জনগণের নানা সমস্যার ব্যাপারে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। গত বৃহস্পতিবারে কাবুল বিমানবন্দরে সংঘটিত ঘটনার ব্যাপারেও গভীর দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানের এইসব সংকট ও সমস্যা মার্কিনিদের কাজ যারা এই দেশটিকে বিশ বছর ধরে দখলে রেখেছে এবং দেশটির জনগণের ওপর নানা ধরনের জুলুম চাপিয়ে দিয়েছে। পার্সটুডে

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতির নেতিবাচক নানা প্রভাবের কথাও উল্লেখ করেন যার মধ্যে রয়েছে বিয়ে ও শোক অনুষ্ঠানে বোমা বর্ষণ, যুবকদের ওপর হত্যাযজ্ঞ, বিনা কারণে বহু মানুষকে কারাবন্দি রাখা এবং মাদক উৎপাদন আগের চেয়েও অন্তত বিশ গুণ বেড়ে যাওয়া। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা একই প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, মার্কিন সরকার আফগানিস্তানের উন্নতির জন্য একটিও পদক্ষেপ নেয়নি এবং বর্তমানে এই দেশটি জনকল্যাণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ বছর আগের তুলনায় পিছিয়ে না থাকলেও এগিয়েও নেই!

তিনি আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ইরানের নীতির কথা তুলে ধরে বলেছেন: আমরা আফগান জনগণের পক্ষে রয়েছি। কারণ সরকারগুলো অতীতের মত আসবে ও যাবে কিন্তু আফগান জনগণ চিরকালই থাকবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আফগানিস্তানে মার্কিন সরকারের তৎপরতাগুলোকে ব্যর্থতাপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, বিশ বছরের মার্কিন দখলদারিত্ব শেষে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোপুরি ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে মার্কিন সেনারা কলংকজনকভাবে আফগানিস্তানের মাটি ত্যাগ করেছে। মার্কিনিদের এমন পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী কয়েক বছর আগেই ইরান করেছিল বলে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। মার্কিন সরকার বিশ বছর আগে যেসব শ্লোগান আর ওয়াদা দিয়ে আফগানিস্তান দখল করেছিল তার একটিকেও বাস্তবতার মুখ না দেখিয়েই এই দেশটিতে মার্কিন সেনা উপস্থিতির অবসান ঘটিয়েছে বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মন্তব্য করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মার্কিন সরকারকে হিংস্র নেকড়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে বাইডেন সরকারের কোনো পার্থক্য নেই, তাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি, মার্কিন সরকার এমন এক হিংস্র নেকড়ে যা মাঝে মধ্যে ধূর্ত শিয়ালে পরিণত হয়। আফগানিস্তানের বতর্মান পরিস্থিতি এর একটি দৃষ্টান্ত।'

এটা স্পষ্ট মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানকে হত্যাযজ্ঞ ও দেশটির অবকাঠামো ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। আর এ বিষয়টি মার্কিন সরকারের বলদর্পি চেহারা বিশ্ববাসীর কাছে আগের চেয়েও বেশি স্পষ্ট করেছে। আফগানিস্তানের জন্য বিশ্ব সমাজ যেসব অর্থ সাহায্য দিয়েছে সেসবকেও উন্নয়নের কাজে লাগাতে দেয়নি মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বলদর্পি শক্তিগুলো।

মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় এখন আফগানদের উচিত দেশ গোত্রীয়, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিবাদ বাদ দিয়ে পুনর্গঠন ও জাতীয় ঐক্য আর সংহতি জোরদারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া এবং জনগণের সব স্তরের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।

গত কয়েক দশক ধরেই আফগানিস্তান হয় গৃহযুদ্ধ অথবা বিদেশি দখলদারদের সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত থেকেছে। আর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সব সময়ই আফগানদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়াকে তার কৌশলগত নীতি হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ফলে ইসলামী এই দেশটি হয়েছে কয়েক মিলিয়ন আফগান শরণার্থীর আশ্রয়স্থল। এ ছাড়াও ইরান আফগানিস্তানের পুনর্গঠন তৎপরতায়ও ব্যাপক সহযোগিতা করে এসেছে।

বর্তমানে তালেবানরা আফগানিস্তানের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সর্বদলীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। তাই কোনো দল বা গোষ্ঠীকে নয় এখনও আফগান জনগণকে সহায়তা দেয়াই হচ্ছে প্রতিবেশী এই দেশটির ব্যাপারে ইরানের মূলনীতি। ইরান মনে করে আফগান জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সব প্রচেষ্টা চালানো উচিত এবং দেশটির জনগণের ইচ্ছার ওপরই সেখানকার নিরাপত্তা নির্ভর করছে। iqna

captcha