IQNA

মুসলিম অভিবাসীদের মার্কিন মুল্লুক জয়ের গল্প

15:44 - April 04, 2019
সংবাদ: 2608261
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের শীতের মধ্যেই স্থানীয় উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে নির্বাচিত গণ-প্রতিনিধি এবং আন্দোলনকারীদের সাথে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে ফেরদাউসা যামা যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটা রাজ্যের মানকাতো শহরের একটি কফি শপে গিয়েছিলেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: সেময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু মুসলিম দেশের নাগরিকদের উপর যুক্তরাষ্ট্র সফরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এক নির্বাহী আদেশ জারী করেছিলেন।

দুই দশক পূর্বে ফেরদাউসা যামা সোমালিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে একজন উদ্বাস্তু হিসেবে এসেছিলেন এবং মিনিসোটা রাজ্যের মানকোতা শহরে বসবাস করতে থাকেন। তিনি আশা করেছিলেন যে, কপি শপের আলোচনায় স্থানীয় সেসব উদ্বাস্তুদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি সমাধান হবে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
তবে তার আশা পূর্ণ হয়নি।

৩৩ বছর বয়সী ফেরদাউসা যামা সেই আলোচনা সভায় একজন আইন-প্রণেতাকে বলতে শোনেন যে, তিনি বলছিলেন, হিজাব পরিধান করা মুসলিম সমাজের সাথে সংহতি প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম যদিও সকল মুসলিম নারী হিজাব পরিধান করেন না।

ফেরদাউসা যামা বলেন, ‘আমি এতে করে খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি, আমি বলতে থাকি যে, যদি এটিই হয় আমাদের প্রতি আপনার একমাত্র উপদেশ তবে আপনি আমাদের সাথে যুক্ত হতে চান না বলেই মনে হয়।’

আর এর পরেই মিনিসোটা শহরের কাউন্সিলর হওয়ার জন্য তার ভ্রমণ শুরু হয়ে যায়। ইসলাম-ভীতি মূলক প্রচারণার মধ্যেই গত বছরের মিনোসোটার নির্বাচনে বেশ কিছু সংখ্যক অভিবাসী এবং অভিবাসীদের সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

গত বছরের আগস্ট মাসে মিনিসোটা রাজ্যের প্রাথমিক নির্বাচনে ১০ জন সোমালি বংশোদ্ভূত আমেরিকান প্রার্থীর মধ্যে ফেরদাউসা যামা ছিলেন অন্যতম। গত বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফেরদাউসা যামা জয় লাভ করেন।

নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- রাষ্ট্রীয় রিপাবলিকান ইলহান ওমার যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে প্রবেশ করা প্রথম কোনো সোমালি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক, মোহাম্মদ নূর যিনি ইলহান ওমারকে পেছনে ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছে. হোদান হাসান যিনি জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এবং সাইদ আলী যিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের কমিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

বহোজওয়ানি নামের একজন নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, ক্রুজ এবং ফেরদাউসা যামা এর মত ব্যক্তিরা ট্রাম্পের অভিবাসী বিরোধী নীতিকে বদলে দিতে চান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজ্যে নতুনদের জন্য অনেক বেশী রাজনৈতিক সুযোগ রয়েছে।’

সাধারণ অভিবাসী অভিজ্ঞতা
কারণ যাই হোক মিনোসোটার রাজনীতিতে অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের উত্থান নতুন কোনো বিষয় নয়।

সাংবাদিক কাল্স বের্গম্যান তার ‘Scandinavians in the State House’ বইতে এই তথ্য দেন যে, ১৯শত এবং ২০শতকের দিকেই নর্ডিক অধিবাসীগণ মিনিশোটায় এসে পৌঁছিয়েছিলেন। সোমালিয়ার অভিবাসীদের মতোই লাইবেরিয়ান, নরওয়েজিয়ান এবং সুইডিস অভিবাসীগণ বিভিন্ন সময় মিনোসোটার স্থানীয় কাউন্সিলের সদস্য, শহরটির প্রধান পুলিশ কর্মকর্তার মত ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এর পরে এ সমস্ত অভিবাসীগণ আরো অগ্রসর হন এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। তাদের অনেকেই মেয়র হন, অনেকে সিনেটর হন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য হন।

স্থানীয় কাউন্সিল সদস্য মিতরা জালালি নেলসন যিনি গত বছরের আগস্ট মাসে মিনিসোটা রাজ্যের প্রথম কোনো ইরানী বংশোদ্ভূত নির্বাচিত কাউন্সিলর হন তিনি বলেন, ‘আমাদের মত অনেকেই অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্ম মনে করি যে, আমাদের পিতামাতা গণ এই ধারা চালু করেছিলেন এবং আমরা আরো ভিন্ন কিছুর দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’

‘আমাদের পিতামাতাগণ হয়ত এখানকার অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারেন নি, কিন্তু আমরা তা বুঝতে সক্ষম হয়েছি।’

কপি শপের আলোচনা শেষে ফেরদাউসা যামা সেখানে অভিবাসীদের সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিনিধিদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে ভগ্ন হৃদয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

যখন তিনি তার ঘরে তার পিতা হুসেইনের সাথে তার ভগ্ন হৃদয়ের কথা আলোচনা করেন তখন তার পিতা তাকে নতুন করে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে বলেন।

ফেরদাউসা যামার পিতা তাকে বলেন, ‘যদি তুমি কোনো পরিবর্তন চাও, অন্য কেউ তোমাকে আলোচনার টেবিলে ডাকবে এমন আশা করা ছেড়ে দিতে হবে। তোমার নিজেকেই নিজে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে হবে।’

এর চার মাস পরে ফেরদাউসা যামা মানকাতো শহরের কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, ‘আমার পিতার সাথে আমার আলোচনার পরে, আমি তাকে বলেছিলাম যে, জাতীয় পর্যায়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু আমি যা করতে পারি তা হচ্ছে, মানকাতো শহরের বাসিন্দা গণ অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে তারা কি ধারণা করেন তা জানতে পারি।’ পিরি ডট ওরগ।

captcha