IQNA

ইসলামে কৃষিভূমির উৎপাদনশীল ব্যবহারের তাগিদ

17:21 - September 14, 2022
সংবাদ: 3472458
তেহরান (ইকনা):  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন যে ব্যক্তি কোনো অনাবাদি ভূমি আবাদ করে তার জন্য আছে তাতে প্রতিদান এবং বিচরণশীল প্রাণী তা থেকে যা আহার করে সেটা তার জন্য সদকাস্বরূপ [ মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৯১৬ ]।
ইসলাম যেকোনো সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। যেন সেই সম্পদ দ্বারা সম্পদের মালিক ও অন্যরা উপকৃত হতে পারে। বিশেষত যে সম্পদের সঙ্গে অন্য মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত তার যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যেমন কৃষি জমি।
 
 
চাষযোগ্য ভূমি যদি অনুৎপাদনশীল অবস্থায় ফেলে রাখা হয়, তবে শুধু ভূমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; বরং ভূমিহীন কৃষক, কৃষি খাতে নিয়োজিত শ্রমিক, বীজ উৎপাদনকারী, বীজ বিক্রেতা, কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী ও সাধারণ ভোক্তা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য ইসলাম কৃষি ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। আর তা করা হয়েছে প্রধানত দুই ভাবে—ক. ভূমি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, খ. যথাযথ ব্যবহার না হলে শাস্তি দেওয়া।
ভূমি আবাদে উৎসাহ দান : ইসলাম ভূমি আবাদে নানাভাবে উৎসাহ প্রদান করেছে। তার কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো—
 
১. আবাদযোগ্য ঘোষণা করা : কোরআনে আল্লাহ ভূমিকে আবাদযোগ্য ঘোষণা করে তাতে জীবিকা অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম (চাষযোগ্য) করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা তার দিগ-দিগন্তে বিচরণ কোরো এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে আহার; পুনরুত্থান তো তাঁরই নিকটে। ’ (সুরা মুলক, আয়াত : ১৫)
 
২. ইবাদত হিসেবে ঘোষণা : ভূমি আবাদ করাকে ইসলাম ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অনাবাদি ভূমি আবাদ করে তার জন্য আছে তাতে প্রতিদান এবং বিচরণশীল প্রাণী তা থেকে যা আহার করে সেটা তার জন্য সদকাস্বরূপ। ’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৯১৬)
 
৩. মালিকানা প্রদান : কোনো ব্যক্তি কোনো অনাবাদি ভূমিকে আবাদ তথা ব্যবহারযোগ্য করলে ইসলাম তাকে ওই ভূমির মালিকানা প্রদান করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অনাবাদি ভূমি আবাদ করবে, সেটা তার। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩০৭৩)। ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, আবাদ করার ভিত্তিতে মালিকানা লাভের ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিম সবাই সমান এবং তা অনাবাদি সব ভূমির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
 
৪. অনাবাদি রাখার শাস্তি : কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের কাছ থেকে আবাদ করার শর্তে কোনো ভূমির মালিকানা লাভ করার পর যদি তা তিন বছরের বেশি সময় ফেলে রাখে তবে ইসলামী রাষ্ট্র তার কাছ থেকে ভূমি ছিনিয়ে নিতে পারবে। কেননা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নিয়ম করেছিলেন, কোনো ব্যক্তি অনাবাদি ভূমির মালিকানা লাভের পর যদি তিন বছরের বেশি সময় তা ফেলে রাখে এবং অন্য কেউ তা আবাদ করে, তবে ভূমির মালিকানা প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। কোনো সাহাবি ওমর (রা.)-এর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি। সুতরাং ফকিহরা ভূমির মালিকানা কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর ইজমার (ঐকমত্য) দাবি করেন। (আন-নিজামুল ইকতিসাদি ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৭৯)
 
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

 

captcha