লাইলাতুল কদর (আরবী: لیلة القدر) এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবী ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।
১৯ শে রমজানের রাত্রি, লাইলাতুল ক্বদরের সূচনার রাত্রি, লাইলাতুল ক্বদর বছরে একবার আসে; এই রাতের ফযিলত অনেক বেশী; এই রাতে কৃত আমল হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম; এই রাতে মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়; এই রাতে রূহ এবং ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে ইমাম মাহদী (আ.)এর সমীপে উপস্থিতির লক্ষ্যে দুনিয়ার বুকে অবতরণ করে এবং মানুষের ভাগ্যলিপিকে তাঁর সম্মুখে উপস্থাপন করে।
লাইলাতুল ক্বদরের আমল দুইভাগে বিভক্ত: সাধারণ আমলসমূহ যা তিন রাত্রিতে সম্পাদন করতে হবে এবং আরেকটি আমল যা বিশেষ দিনের সাথে সম্পৃক্ত।
১৯, ২১ এবং ২৩ রমজানের রাতের সাধারণ আমলসমূহ:
১। গোসল করা।
আল্লামা মাজলিসি (রহ.) লাইলাতুল ক্বদরের উদ্দেশ্যে সূর্যাস্তের নিকটবর্তি সময়ে গোসল করা উত্তম যেন এই গোসল দ্বারা মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া যায়।
২। লাইলাতুল ক্বদরের বিশেষ দুই রাকাত নামাজ পড়া।
নিয়ত: লাইলাতুল ক্বদরের দুই রাকাত নামায পড়ছি কুরবাতান ইলাল্লাহ।
নামাজটি পড়ার পদ্ধতি: প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৭ বার সূরা ইখলাস (কুলহুওল্লাহ্) পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতটিও অনুরূপ পদ্ধতিতে পড়তে হবে।
৩। নামাযান্তে ১০০ বার অথবা ৭০ বার পাঠ করতে হবে
أَسْتَغْفِرُ اللّه وَ أَتوبُ الَيْهِ
(আসতাগ ফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি) পাঠ করতে হবে।
রাসুল (সা.) হতে রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: এই আমলকারী তার স্থান হতে ওঠার পূর্বেই আল্লাহ তাকে এবং তার পিতা-মাতাকে ক্ষমা করে দিবেন।
৪। নিজের গুনাহসমূহকে স্মরণ করে ১০০ বার বলতে হবে।
(আস্তাগ ফিরুল্লা-হা রব্বী ওয়া আতূবু ইলাইহি)
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ رَبِّي وَ أَتُوبُ إِلَيْه
৫। পবিত্র কুরআন শরীফ খুলে নিজের সামনে রেখে বলতে হবে :
اَللَّهُمَّ اِنّي اَسئَلُك بِكِتَابِكَ المُنْزَلِ وَ مَا فِيْهِ اسْمُكَ الاَكْبَرُ و اَسمَاؤُكَ الحُسنَي وَ مَا يُخَافُ وَ يُرجَي اَن تَجعَلَنِي مِن عُتَقائِكَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা বি কিতা-বিকাল মুনযাল ওয়ামা- ফীহিস মুকাল আকবার ওয়া আসমা-উকাল হুসনা ওয়ামা- ইউখা-ফু ওয়া ইউরজা আন তাজআ'লানী মিন উতাক্বা-য়িকা মিনান না-র।
তারপর মনোবাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
৬। কোরআন শরীফ মাথায় রেখে বলতে হবে :
اَللّهمَّ بِحَقِّ هذاالقُرآنِ وَ بِحَقِّ مَن اَرسَلتَهُ بِه وَ بِحَقِّ كُلِّ مُومِنٍ مَدَحْتَهُ فِيْهِ وَ بِحَقِّكَ عَلَيْهِمْ فَلاَ اَحَدَ اَعرَفُ بِحَقِّكَ مِنْكَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা বি হাক্বি হা-যাল কুরআ-নি ওয়া বিহাক্কি মান আরসালতাহু বিহি ওয়া বিহাক্কি কুল্লি মু’মিনিন মাদাহ্তাহু ফীহি ওয়াবি হাক্কিকা আ'লাইহিম ফালা- আহাদা আ'রাফু বিহাক্কিকা মিনকা।
তারপর বলতে হবে :
১০ বার : (بِكَ يَا اللَّهُ)- বিকা ইয়া আল্লাহু
১০ বার : (بِمُحَمَّدٍ) - বিমুহাম্মাদিন
১০ বার : (بِعَليٍّ) - বিআ'লীইন
১০ বার : (بِفاطِمَةَ) - বিফাতিমাহ্
১০ বার : (بِالحَسَنِ) - বিল হাসানি
১০ বার : (بِالحُسَينِ) - বিল হুসাইনি
১০ বার : (بِعلي بنِ الحُسين) - বিআ'লী ইবনিল হুসাইন
১০ বার : (بِمُحَمَّدِ بنِ عَلِى) - বিমুহাম্মাদ ইবনি আ'লী
১০ বার : (بِجَعفَر بنِ مُحَمَّدٍ) - বিজা'ফার ইবনি মুহাম্মাদ
১০ বার : (بِموُسي بنِ جَعفَرٍ ) - বিমূসা ইবনি জা'ফার
১০ বার : (بِعلي بنِ مُوسي) - বিআ'লী ইবনি মূসা
১০ বার : (بِمُحَمَّدِ بنِ عَلَى) - বিমুহাম্মাদ ইবনি আ'লী
১০ বার : (بِعَلَى بنِ مُحَمَّدٍ) - বিআলী ইবনি মুহাম্মাদ
১০ বার : (بِالحَسَنِ بنِ عَلَى) - বিল হাসান ইবনি আ'লী
১০ বার : ((بِالحُجَّةِ))- বিল হুজ্জাহ্
তারপর দোয়া করতে হবে।
৭। ইমাম হুসাইন (আ.)এর যিয়ারত পাঠ করা।
১৯ শে রমজান রাতের বিশেষ আমলসমূহ নিন্মরূপ:
১। ১০০ বার পাঠ করতে হবে:
اَسْتَغْفِرُاللَّهَ رَبّي وَ اَتُوبُ إلَيهِ
আস্তাগ ফিরুল্লা-হা রব্বী ওয়া আতূবু ইলাইহি।
২। ১০০ বার পাঠ করতে হবে:
اَللَّهُمَّ الْعَنْ قَتَلَةَ اَميرِ الْمُؤْمِنينَ
আল্লা-হুম্মাল আ'ন ক্বতালাতা আমীরিল মু'মিনীন।
৩। নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতে হবে।
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِيمَا تَقْضِي وَ تُقَدِّرُ مِنَ الْأَمْرِ الْمَحْتُومِ وَ فِيمَا تَفْرُقُ مِنَ الْأَمْرِ الْحَكِيمِ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَ فِي الْقَضَاءِ الَّذِي لا يُرَدُّ وَ لا يُبَدَّلُ أَنْ تَكْتُبَنِي مِنْ حُجَّاجِ بَيْتِكَ الْحَرَامِ الْمَبْرُورِ حَجُّهُمْ الْمَشْكُورِ سَعْيُهُمْ الْمَغْفُورِ ذُنُوبُهُمْ الْمُكَفَّرِ عَنْهُمْ سَيِّئَاتُهُمْ وَ اجْعَلْ فِيمَا تَقْضِي وَ تُقَدِّرُ أَنْ تُطِيلَ عُمْرِي وَ تُوَسِّعَ عَلَيَّ فِي رِزْقِي وَ تَفْعَلَ بِي كَذَا وَ كَذَا.
আল্লা-হুম্মাজ আল ফীমা তাক্বদ্বি ওয়া তুক্বাদ্দিরু মিনাল আমরিল মাহতূমি ওয়া ফীমা তাফরুক্বু মিনাল আমরিল হাকীমি ফী লাইলাতিল ক্বদরি ওয়া ফীল ক্বদ্বা-ইল লাযী লা ইউরদ্দু ওয়া লা তুবাদ্দালু আন তাকতুবানী মিন হুজ্জা-জি বাইতিকাল হারা-মিল মাবরুরি হাজ্জুহুমুল মাশককূরি সা' ইউহুমুল মাগফূরি যুনূবুহুমুল মুকাফফারি আ'নহুম সাইয়িআ-তুহুম ওয়াজ আ'ল ফীমা তাক্বদ্বি ওয়া তুক্বাদ্দিরু আন তুতীলা উ'মরি ওয়া ওয়াসসিআ' আ'লাইয়া ফী রিযক্বী ওয়া তাফআ'লা বি কাযা কাযা।
كَذَا وَكَذَا এই স্থানে নিজের মনোবাসনা পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।