IQNA

পবিত্র কুরআনের সূরাসমূহ/২

কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরার ৭টি মূল বিষয়

22:57 - May 22, 2022
সংবাদ: 3471881
তেহরান (ইকনা): পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় সূরার নামা “বাকারা”। আর এটি কুরআনের দীর্ঘতম সূরা। এই সূরার মধ্যে ৭টি মৌলিক বিষয় রয়েছে যা কুরআনের সমস্ত সূরা বোঝার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। 
সূরা বাকারা হল কুরআনের দ্বিতীয় সূরা এবং এতে ২৮৬টি আয়াত রয়েছে এই সূরাটি “মাদানী” সূরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ এই সূরাটি নবী করিম (সা.)এর হিজরতের পর নাযিল হয়েছে। যেহেতু নবী করিম (সা.) মদিনায় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এজন্য মাদানী সূরাসমূহের মধ্যে সামাজিক আহকাম, আইন এবং আইন প্রণয়নের বিষয়সমূহ রয়েছে। 
 সূরা বাকারা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে হেদায়েতের উপর জোর দিয়ে শুরু হয়েছে; ; অতঃপর মহান আল্লাহ এবং কিতাবুল্লাহর প্রচারকদের বিরুদ্ধে মানুষের দলবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আয়াত নাযিলের সময় আহলে কিতাব বিশেষ করে ইহুদীদের বিভিন্ন পন্থা বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর সমস্ত মানুষকে আল্লাহ্‌র বন্দেগী ও খোদায়ী তাকওয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে অন্য এক অভিব্যক্তিতে পবিত্র কুরআন নিয়ে সকল প্রকার সংশয়কে অস্বীকার করা হয়েছে।
এছাড়াও কিছু কাফের ইহুদিদের পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে এবং চুক্তি ভঙ্গ, কাপুরুষতা এবং দুর্নীতির মাধ্যমে তারা অন্যদের ক্ষতি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 
এটি কিছু কাফের ইহুদিদের অবস্থাও বর্ণনা করে এবং তাদের ক্ষতির প্রধান কারণ হিসাবে চুক্তি ভঙ্গ, কাপুরুষতা এবং দুর্নীতির পরিচয় দেয়। অতঃপর, পুনরায় মানুষকে মহান আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে যে, এক আল্লাহকে যারা অবিশ্বাস করে তাদের কর্ম অত্যন্ত অদ্ভুত। কাফের বা অবিশ্বাসীদের আচরণের প্রতি আশ্চর্য প্রকাশ করে মৃতদের ক্রমাগত পুনরুত্থান এবং পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির সূচনার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। হযরত আদম ও হাওয়ার সৃষ্টির কাহিনী, আদমকে সেজদা করা থেকে শয়তানের অবাধ্যতা এবং শয়তানের প্রতারণার মাধ্যমে পৃথিবীতে পতিত হওয়া হযরত আদম ও হাওয়ার কাহিনী এই সূরায় তুলে ধরা হয়েছে। 
মোহাম্মদ ইজ্জাত দারুজেহ তার "আল-তাফসিরুল হাদিস" বইতে বলেছেন: “সূরা বাকারা হল পবিত্র কুরআনের একটি কমবেশি দীর্ঘ ভূমিকা, যা কুরআনের সমস্ত আয়াত এবং অধ্যায়গুলির জন্য একটি উপযুক্ত ভূমিকা হিসাবে বিবেচিত হয়”।
সূরা বাকারা দীর্ঘ হওয়ার কারণ হল, এই সূরায় বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।  গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মূল বিষয়সমূহ নীচে তুলে ধরা হল:
১- তৌহিদ
এই সূরাটিতে, বিশেষ করে সৃষ্টির রহস্য অধ্যয়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে চেনার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
২- মৃত্যুর পর জীবন
মা’য়াদ অর্থাৎ পুনরুত্থান এবং মৃত্যুর পরে জীবন। এই সূরায় হযরত ইবরাহিম (আ.) মৃত পাখিকে জীবিত করা এবং হযরত উজাইর (আ.)-এর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। 
৩- পবিত্র কুরআনের গুরুত্ব
সূরা বাকারায় পবিত্র কুরআনের মু’জেজা বা অলৌকিকতা এবং এই আসমানী গ্রন্থের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছ। 
৪- ইহুদী ও মুনাফিকদের নাশকতা
ইহুদী ও মুনাফিকদের সম্পর্কে অত্যন্ত বিস্তারিত ও দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে এবং খোদায়ী নির্দেশ, বিশেষ করে ইসলাম ও কুরআনের বিরুদ্ধে তাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান এবং এ ব্যাপারে তাদের বিভিন্ন নাশকতা সূরা বাকারায় ব্যক্ত করা হয়েছে। মুনাফিকরা এমন একদল লোক যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে জাহির করে এবং তাদের সাথে থাকে, কিন্তু বাস্তবে ইসলামে বিশ্বাস করে না এমনকি ইসলাম ধর্মের লক্ষ্যের বিরুদ্ধে তারা কাজ করে।
৫- নবীদের ইতিহাস
মহান নবীদের ইতিহাস এই সূরার তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে হযরত আদম (আ.) হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং হযরত মূসা (আ.)এর ইতিহাস তুলে ধলা হয়েছে।
৬- শরিয়াগত আইন
নামাজ, রোজা, আল্লাহর পথে জিহাদ, হজ ও কিবলা পরিবর্তন, বিয়ে ও তালাক,  এবং ব্যবসার নিয়মকানুনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই সূরায় বর্ণিত হয়েছে।
৭- অভাবীকে সাহায্য করা
এই সূরার কয়েকটি আয়াতে আল্লাহর পথে দান করা এবং অভাবীকে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। 
 
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha