IQNA

রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধে রাখাইনে উগ্র বৌদ্ধদের বিক্ষোভ

12:32 - October 23, 2017
সংবাদ: 2604138
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সে দেশের সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে দেশটির কট্টরপন্থী বৌদ্ধরা। রবিবার রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তুইয়ে আয়োজিত এই বিক্ষোভে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শত শত উগ্রপন্থী অংশ নেয়।

বার্তা সংস্থা ইকনা: ২০১২ সালের সহিংসতার সময় এই সিত্তুই থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তার আগ পর্যন্ত এই শহরটি ছিল রোহিঙ্গা অধ্যূষিত।

গত ২৫ আগস্ট উত্তর রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান শুরু করলে সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।

বিক্ষোভ আয়োজকদের একজন অং হুতাই এপি’কে বলেন, ‘মিয়ানমারের যেকোনো নাগরিককে তারা রাখাইনে স্বাগত জানাবেন। তবে নাগরিক হওয়ার অধিকার যাদের নেই, তাদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।’

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না এবং তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে আসা বাঙ্গালী অভিবাসী বলে অভিহিত করে। দেশটির ১৩৫টি জাতিগত গোষ্ঠী থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ দেয়া হয়েছে এবং তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি।

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে অং সান সুচি বলেন, ‘রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া ‘মানুষের’ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুই বার এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সফল অতীতের উপর ভিত্তি করে আমরা তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছি।’

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকার একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে সম্মত হয়েছে। তবে বৌদ্ধ উগ্রবাদীরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আয়োজনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেয়া সু চির পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন করতে দেবে না।

এদিকে, বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার নব্বই দশকের যে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, তাতে একটুও ভরসা দেখছেন না শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। অতীতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রাখাইনে ফিরে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বারের মতো আসা এমন রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা শুনলেই অতীত স্মৃতিতে ‘বিভীষিকার চিহ্ন’ দেখছেন।

যে চুক্তির ভিত্তিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলছে, তাতে যাচাই-বাছাইয়ে বৈধ প্রমাণপত্র হাজিরের শর্ত আছে। পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ফেলে শুধুমাত্র জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন: বৈধ-অবৈধ পরের প্রশ্ন; কাগজপত্র কোথায় পাবে তারা?

কেবল রোহিঙ্গা নয়, এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নীতিতে নিজেদের আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছে। মায়ানমারের রাখাইনে ভয়ঙ্কর মানবাধিকার হরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে জোর করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠানো উচিৎ হবে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।  আরটিএনএন
captcha